তসলিমা নাসরিন (জন্ম: ২৫ আগস্ট, ১৯৬২) বাংলাদেশের বহুল আলোচিত ও
বিতর্কিত নারীবাদী সাহিত্যিক। তসলিমা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে অধ্যয়ন করেন
এবং সেখান থেকে ১৯৮৬ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি সরকারী
হাসপাতালে চিকিৎসক হিসাবে ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দ অবধি কাজ করেন। ১৯৯৪
খ্রিস্টাব্দে মামলায় জড়িয়ে পড়ে গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি দেশত্যাগে বাধ্য
হন। এরপর তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেন।
ছাত্রজীবনে ১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে কবি হিসেবে তাঁর পরিচিতি ঘটতে থাকে।
নির্বাসন জীবনে তসলিমা লেখালিখিকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। বিংশ শতাব্দীর
শেষভাগে বিদ্রোহী নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গি এবং ইসলামের সমালোচনার জন্য
বিশ্বব্যাপী তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে। স্বীয় জন্মভূমি বাংলাদেশ ত্যাগের পর
তিনি প্রতিবেশী বাংলাভাষী পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
কিন্তু ভারতীয় ইসলামী ধর্মগুরুদের আপত্তি ও মৌলবাদীদের প্রাণনাশের হুমকির
পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে তাঁকে কলকাতা পরিত্যাগ করতে হয়। বর্তমানে
তিনি সুইডেনে বসবাস করছেন। তাঁর রচনাসমূহের মধ্যে লজ্জা, আমার মেয়েবেলা, দ্বিখণ্ডিত, গোল্লাছুট, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
প্রাথমিক জীবন
তাঁর প্রকৃত নাম নাসরিন জাহান তসলিমা। স্কুল জীবনে কবিতা চর্চ্চার
সময় তিনি 'তসলিমা নাসরিন' নাম গ্রহণ করেন। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে ময়মনসিংহ
শহরে তাঁর জন্ম। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তাঁর পিতা রজব আলী
পেশায় চিকিৎসক ছিলেন। মা ইদুল আরা সাধারণ ধর্মভীরু বাঙ্গালী গৃহিনী,
তসলিমার পিতার দ্বিতীয় স্ত্রী। । ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি ময়মনসিংহ
রেসিডেন্সিয়াল স্কুল থেকে এস, এস, সি পাস করেন। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে
তিনি আনন্দ মোহন কলেজ থেকে এইচ এস সি পাস করেন। এরপর তিনি ময়মনসিংহ
মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে এম বি বি এস
পাস করেন। অথঃপর তিনি সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসকের চাকুরী গ্রহণ করেন। তিনি
যখন ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে দেশত্যাগ করেন তখন সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ
হাসপাতালে অজ্ঞানবিশেষজ্ঞ (অ্যানেসথেসিওলজিস্ট) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার
শৈশব ও যৌবনের বিশদ বিবরণ তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থাদির বিভিন্ন খণ্ডে
পাওয়া যায়।
বিবাহ
১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে তিনি কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ'র প্রেমে
পড়েন এবং বাবা-মা ও আত্মীয়-স্বজন কাউকে না জানিয়ে গোপনে বিয়ে করেন।
১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। পরে বাংলাদেশের প্রখ্যাত
সাংবাদিক ও সম্পাদক নাইমুল ইসলাম খানের সাথে বিয়ে এবং ১৯৯১ সালে বিচ্ছেদ
হয়। তিনি ১৯৯১ সালে সাপ্তাহিক বিচিন্তা'র সম্পাদক মিনার মনসুরকে বিয়ে
করেন এবং ১৯৯২ সালে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর তিনি আর বিয়ে করেন নি।
তার কোন সন্তানাদি নেই। তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যুগল
জীবন যাপন করেছেন। তিনি একজন উভকামী। প্যারিস অবস্থান কালে একজন ফরাসী
মেয়ের সঙ্গে যৌন জীবনযাপনের বিবরণ তাঁর আত্মজৈবিনক উপন্যাস ফরাসী
প্রেমিক এবং আত্মজীবনিক রচনায় বিবৃত।
সাহিত্যিক জীবন
সাহিত্যে
জগতে প্রবেশ সত্তর দশকের শেষভাগে কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে। ১৯৮১
খ্রিস্টাব্দে স্ব-উদ্যোগে প্রথম কবিতা সংকলন প্রকাশ করেন যার নাম শিকড়ে বিপুল ক্ষুধা। তাঁর
কবিতা গীতিময়তায় পুষ্ট। আত্মজৈবনিকতা তাঁর কবিতার বৈশিষ্ট্য। প্রথম
থেকেই তাঁর কবিতায় যৌনানুষঙ্গ প্রবলভাবে উপস্থিত, যা পরবর্তীতে তাঁর গদ্য
রচনাতেও পরিদৃষ্ট হয়।
২২। সকল গৃহ হারালো যার (Sokol_Griho_Haralo_Jar)